বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে রাজশাহী মহানগর, পুঠিয়া ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন আম বাগানে ঘুরে দেখা গেছে, আমচাষিরা গাছপাকা গুটি জাতের আগাম আম পাড়ছেন এবং তা বানেশ্বর হাটসহ বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসছেন। ধীরে ধীরে উন্নত জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করবে।
বাগান মালিকদের মতে, এবছর আমের ফলন গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও বাজারদর তুলনামূলকভাবে কম। তবে সময়মতো আম পাড়ার সুযোগ পাওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। আগামী কয়েক সপ্তাহে গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা এবং অন্যান্য উন্নত জাতের আম পর্যায়ক্রমে নামানো হবে।
এ বছর রাজশাহীতে ১৯,৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২,৬০,০০৬ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে আম চাষ হয়েছিল ১৯,৬০২ হেক্টর জমিতে।
আম পাড়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী:
গোপালভোগ: ২২ মে থেকে
লখনা (লক্ষণভোগ) ও রানীপছন্দ: ২৫ মে থেকে
হিমসাগর ও খিরসাপাত: ৩০ মে থেকে
ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাংগো: ১০ জুন থেকে
আম্রপালি ও ফজলি: ১৫ জুন থেকে
বারি-৪: ৫ জুলাই থেকে
আশ্বিনা: ১০ জুলাই থেকে
গৌড়মতি: ১৫ জুলাই থেকে
এছাড়া কাটিমন এবং বারি-১১ জাতের আম পেকে গেলে যেকোনো সময় নামানো যাবে, ক্যালেন্ডার অনুসরণ না করেও।
রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, “প্রশাসনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ থেকে গুটি আম পাড়ার অনুমতি আছে। কিন্তু ক্রেতারা গুটি জাতের আম খেতে চায় না, তাই আমি এখনো দোকানে আম তুলিনি।”
ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বাগানে আম পাড়ছিলেন চাষি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন সাগরিকা আম নামানো শুরু করেছি। এবার সময়মতো ক্যালেন্ডার কার্যকর হওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। গাছেও আম ভালোভাবে পেকেছে।”
এই গুটি জাতের আমগুলোকে অনেকে “আঁটি আম” বলেও ডাকেন। গুটি জাতের প্রায় ৩০০ ধরনের আম রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য জাতের তুলনায় আগেভাগেই পাকতে শুরু করে। চোষা (চোরষা), বৈশাখী এবং চাপড়া নামের আমও ইতোমধ্যে নামানো শুরু হয়েছে।
বাঘা উপজেলার আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, প্রথম দিন বড় আকারের গুটি আম মণপ্রতি ১,৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, আর ছোট আকারের আম ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা দরে। গত বছরের তুলনায় এবছর শুরুতেই দাম কিছুটা কম।
তিনি আরও বলেন, “এলাকার অন্য বাগানগুলোতে ফলন ভালো হলেও আমার বাগানে কিছুটা কম হয়েছে। তবুও বাজারে যেভাবে শুরু হয়েছে এবং দাম কমে যাচ্ছে, তাতে আমরা কিছুটা হতাশ।”
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা জানান, চাষিরা ইতোমধ্যে আম পাড়া শুরু করেছেন। এই আম পাড়ার মৌসুম জুলাই মাস পর্যন্ত চলবে। আশা করা যাচ্ছে, এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।